SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - পদার্থবিজ্ঞান (পুরোনো সংস্করণ) - স্থির বিদ্যুৎ(Static Electricity) | NCTB BOOK

এই অধ্যায়ের শুরুতে বলা হয়েছে চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ানোর পর সেই চিরুনিটি যখন ছোট ছোট কাগজের কাছে আনা হয় তখন কাগজগুলো লাফিয়ে চিরুনির কাছে চলে আসে। বোঝা যায় চিরুনিটা কাগজের টুকরোগুলোকে আকর্ষণ করছে। আমরা এখন জানি চিরুনিটাতে নেগেটিভ চার্জ জমা হয়েছে এবং সে কারণেই চিরুনিটা কাগজের টুকরোগুলোকে আকর্ষণ করছে। কিন্তু এখানে একটা ছোট জটিলতা আছে। আমরা দেখেছি বিপরীত চার্জ আকর্ষণ করে, তাই কাগজগুলোকে আকর্ষণ করতে হলে সেগুলোকে অবশ্যই চিরুনির বিপরীত চার্জ হতে হবে কিছু আমরা জানি কাগজের টুকরোগুলোতে কোনো চার্জই নেই তাহলে চিরুনি কেন এগুলোকে আকর্ষণ করছে? 

চিত্র 11.04:চার্জ বিহীন বস্তুর কাছে চারজসহ বস্তু আনা হলে বিপরীত চার্জ আবেশিত হয়

ব্যাপারটা ঘটে বৈদ্যুতিক আবেশ নামের একটা প্রক্রিয়ার জন্য। কাচ কিংবা প্লাস্টিকে চার্জ জমা করে সেটাকে যদি চার্জহীন কোনো কিছুর কাছে আনা হয় তাহলে সেই চার্জহীন বস্তুটার মাঝে এক ধরনের চার্জ জন্ম নেয়। বিষয়টা বোঝানোর জন্য 10.01 চিত্রটিতে একটা ধাতৰ গোলক দেখানো হয়েছে, এটাকে রাখা হয়েছে বিদ্যুৎ অপরিবাহী স্ট্যান্ডের ওপর। এখন একটা কাচকে সিল্ক দিয়ে খুব ভালো করে ঘষে তার মাঝে চার্জ জমা করে নিয়ে সেটা ধাতব গোলকের কাছে নিয়ে এলে ধাতব গোলকের নেগেটিভ চার্জগুলো আকর্ষিত হয়ে কাছে চলে আসবে এবং গোলকের পেছন দিকে পজিটিভ চার্জগুলো সরে যাবে। এখন কাচ দণ্ড পজিটিভ চার্জযুক্ত, কাচ দন্ডের কাছাকাছি গোলকের অংশটুকু নেগেটিভ চার্জযুক্ত কাজেই এরা পরস্পরকে আকর্ষণ করবে।এবারে আমরা চিরুনি দিয়ে কাগজের টুকরোকে আকর্ষণ করার ব্যাপারটা বুঝতে পারব। যখন কাগজের টুকরোর কাছাকছি নেগেটিভ চার্জযুক্ত চিরুনিটা আনা হয় তখন কাগজের টুকরোর যে অংশ কাছাকাছি সেখানে পজিটিভ চার্জ আবেশিত হয় আর সাথে সাথে যে অংশ দূরে সেখানে নেগেটিভ চার্জ জমা হয়। কাগজের টুকরোর পজিটিভ চার্জের অংশটুকু চিরুনির আকর্ষণ অনুভব করে আর কাগজের টুকরোর নেগেটিভ অংশটুকু চিরুনির বিকর্ষণ অনুভব করে। কিন্তু যেহেতু পজিটিভ চার্জের অংশটুকু চিরুনির কাছে তাই আকর্ষণটুকু বিকর্ষণ থেকে বেশি, সেজন্য কাগজের টুকরো আকর্ষিত হয়ে লাফিয়ে চিরুনির কাছে চলে আসে | 

এরপর আরো একটা ব্যাপার ঘটে, তোমরা হয়তো নিজেরাই সেটা লক্ষ করেছ। কাগজের যে টুকরোগুলো লাফিয়ে চিরুনির পায়ে লেগে যায় সেগুলো আবার প্রায় সাথে সাথেই চিরুনি থেকে ছিটকে নিচে চলে আসে। (চিত্র10.05)

এর কারণটাও নিশ্চয়ই তোমরা বুঝতে পারছ, কাগজের টুকরোটা যদি আকর্ষিত হয়ে চিরুনির গায়ে লেগে যায় তাহলে সেটার আর আবেশিত থাকতে হয় না। চিরুনির নেগেটিভ চার্জ দিরে এটা নিজেই নেগেটিভ চার্জে ভরে যায়। তখন সেগুলো চিরুনি থেকে বিকর্ষিত হরে ছিটকে নিচে নেমে আসে। যারা বিশ্বাস করো না তারা বিষয়টা একবার পরীক্ষা করে দেখতে পারো।বাতাসে জলীয় বাষ্প থাকলে জমা হওয়া চার্জ মুত হারিয়ে যায়। তাই স্থির বিদ্যুতের এই এক্সপেরিমেন্টগুলো শীতকালে অনেক বেশি ভালো কাজ করে। 

এই অধ্যায়ের শুরুতে আমরা তিনটি ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কথা বলেছিলাম। এতক্ষণে সেগুলো কেন ঘটেছে তোমরা নিশ্চয়ই সেটা বুঝে গেছ। চিরুনির বিষয়টা ব্যাখ্যা করা হয়েছে। ছোট শিশুর হামাগুড়ি দেওয়ার বিষয়টাও বোঝা কঠিন নয়। কার্পেটে ঘবে ঘষে যাবার জন্য তার শরীরে চার্জ জমা হয়, সারা শরীরের সাথে সাথে চুলেও সেই চার্জ ছড়িয়ে পড়ে। সব চুলে একই চার্জ। আমরা জানি এক ধরনের চার্জ বিকর্ষণ করে তাই একটা চুল অন্য চুলকে বিকর্ষণ করে খাড়া হয়ে ছড়িয়ে পড়ে। এখন আমরা বজ্রপাতের বিষয়টাও ব্যাখ্যা করতে পারব। মেঘের সাথে মেঘের ঘর্ষণে সেখানে চার্জ আলাদা হয়ে যায়। আকাশের মেঘে যখন বিপুল পরিমাণ চার্জ জমা হয় তখন সেটা নিচে বিপরীত চার্জের আবেশ তৈরি করে এবং মাঝে মাঝে সেটা এত বেশি হয় যে বাতাস ভেদ করে সেটা মেঘের সাথে যুক্ত হরে যায়, যেটাকে আমরা বজ্রপাত বলি।(চিত্র10.07)

Content added By
Content updated By

ইলেকট্রোস্কোপ স্থির বিদ্যুৎ পরীক্ষার জন্য খুব চমৎকার একটা যন্ত্র। যন্ত্রটা খুবই সহজ, এখানে চার্জের অস্তিত্ব বোঝার জন্য রয়েছে খুবই হালকা সোনা, অ্যালুমিনিয়াম বা অন্য কোনো ধাতুর দুটি পাত। এই পাত দুটো একটা সুপরিবাহী দণ্ড দিয়ে একটা ধাতব চাকতির সাথে লাগানো থাকে, পুরোটা একটা অপরিবাহী ছিপি দিয়ে কাচের বোতলের ভেতর রাখা হয়, যেন বাইরে থেকে দেখা যায় কিন্তু বাতাস বা অন্য কিছু যেন পাতলা ধাতব পাত দুটোকে নাড়াচাড়া করতে না পারে। 

চার্জ আহিতকরণ 

একটা কাচের টুকরোকে সিল্ক দিয়ে ঘষা হলে কাচ দণ্ডটাতে পজিটিভ চার্জ জমা হবে। এখন কাচ দণ্ড যদি ইলেকট্রোস্কোপের ধাতব চাকতিতে ছোঁয়ানো যায় তাহলে সাথে সাথে খানিকটা চার্জ চাকতিতে চলে যাবে। চাকতি যেহেতু ধাতব দণ্ড আর সোনার পাতের সাথে লাগানো আছে, তাই চাটুকু সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়বে। সোনার পাতে যখন একই পজিটিভ চার্জ এসে হাজির হবে আর তখন দেখা যাবে পাত দুটো বিকর্ষণ করে তাদের মাঝে একটা ফাঁক তৈরি হয়েছে। 

ঠিক একইভাবে একটা চিরুনিকে যদি ফ্লানেল দিয়ে ঘষা হয় তাহলে চিরুনিটাতে নেগেটিভ চার্জ জমা হবে, এখন সেটা যদি চাকতিতে স্পর্শ করা হয় তাহলে নেগেটিভ চার্জ সোনার পাত পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়বে এবং দুটো পাত একটা আরেকটাকে বিকর্ষণ করে ফাঁক হয়ে যাবে। 

চার্জের প্রকৃতি বের করা 

কোনো একটা বস্তুতে যদি চার্জ জমা হয় তাহলে সেটা কি পজিটিভ নাকি নেগেটিভ চার্জ সেটা ইলেকট্রোস্কোপ দিয়ে বের করা যায় । প্রথমে ইলেকট্রোস্কোপের চাকতিতে পরিচিত কোনো চার্জ 

দিতে হবে। ধরা যাক কাচকে সিল্ক দিয়ে ঘষে পজিটিভ চার্জ তৈরি করে আমরা সেটাকে চাকতিতে স্পর্শ করলে যদি সোনার পাত দুটির ফাঁক কমে যায় তাহলে বুঝতে হবে এর মাঝে নেগেটিভ চার্জ। যদি ফাঁকটি আরো বেড়ে যায় তাহলে বুঝতে হবে চার্জটি নিশ্চয়ই পজিটিভ। 

চার্জের আবেশ 

কোনো একটা বস্তুতে চার্জ আছে কি না সেটা চাকতিকে স্পর্শ না করেই বোঝা সম্ভব। ধরা যাক পজিটিভ চার্জ আছে এ রকম একটা দণ্ডকে চাকতির কাছে আনা হয়েছে, তাহলে চাকতির মাঝে নেগেটিভ চার্জের আবেশ হবে। এই নেগেটিভ চার্জের আবেশ তৈরি করার জন্য ইলেকট্রোস্কোপের অন্যান্য অংশ থেকে নেগেটিভ চার্জকে চাকতির মাঝে চলে আসতে হবে, সে কারণে সোনার পাত দুটিতেও পজিটিভ চার্জ তৈরি হবে। সেই পজিটিভ চার্জ সোনার পাত দুটোর মাঝে একটা ফাঁক তৈরি করবে। 

যদি পজিটিভ চার্জ দেওয়া কোনো কিছু না এনে নেগেটিভ চার্জ দেওয়া কিছু আনি তাহলেও আমরা দেখব সোনার পাত দুটো ফাঁক হয়ে যাচ্ছে, তবে এবারে সেটি হবে সেখানে নেগেটিভ চার্জ জমা হওয়ার কারণে। 

 

Content added By
Content updated By